অনাইন ডেস্ক:
২০০ বছরের অধিক সময় ধরে বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের বকচর এলাকায় আয়োজন করা হচ্ছে মাছের মেলা। লোকমুখে এই মেলা জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো জামাই ও শ্বশুর কে কত বড় মাছ কিনলেন, সেটি নিয়ে চলে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। এখানকার মানুষের কাছে এ মেলা এখন ঐতিহ্যের অংশ, একটি উৎসব।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে ফসলের মাঠ। কেউ ধান রোপণ করছেন, কেউবা সবজি। মাঝের একটি ফাঁকা মাঠে বসেছে মাছের মেলা। সকালে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেই মেলায় মানুষ ছুটে আসছে। এর আগে ট্রাক, পিকআপ ও অটোরিকশায় মাছ ব্যবসায়ীরা বড় বড় মাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন মেলায়। দুপুরের মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে আসা মাছের ক্রেতাদের ভিড়ে কোথাও যেন থাকার জায়গা নেই। তার মধ্যে সমানতালে চলছে মাছের বেচাবিক্রি।
প্রতিবছর মাঘ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের বুধবার এ মেলা বসে। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে মানুষজন। এদিন এলাকার প্রতিটি বাড়িতে থাকে নতুন পুরোনো অতিথি দিয়ে ভরা। বকচরসহ আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সেসব জামাই এই মেলার মূল ক্রেতা। জামাইরা সবচেয়ে বড় মাছ কিনে খুশি মনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান। আবার তাদের আপ্যায়ন করতে শ্বশুরপক্ষও মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান বাড়িতে।
ব্যবসায়ীরা থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে মাছ। কেউ মাছ কিনেছেন, কেউবা দেখছেন আর ছবি তুলছেন। মেলায় কোনো কোনো মাছের ওজন ২০ থেকে ৫০ কেজি। মাছ ছাড়ও মেলায় বিক্রি হয় হরেক রকম পণ্য।
ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ জানান, তিনি ৩৩ বছর ধরে মেলায় মাছ বিক্রি করছেন। এবার তিনি ২৫ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছেন। যার দাম হাঁকানো হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।
মেলায় আসা হোসেন আলী জানান, মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিবছর শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। এখান থেকে বড় আকারের মাছ কেনার চেষ্টা করেন। এবার ১৫ কেজি ওজনের কাতলসহ ৫০ হাজার টাকার মাছ কেনা হয়েছে।
ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন শিপন বলেন, মেলাটির প্রচলন কত বছর আগে শুরু হয়েছে, এর সঠিক তথ্য কেউ বলতে পারে না। তবে গ্রামের মুরব্বিরা জানান, ২০০ বছর আগে এই মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে। এটি মাছের মেলা হলেও মানুষ এটাকে জামাই মেলা হিসেবে চেনে। মেলা উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন অনেকে।